Ek Agaro - এক-এগারো - লেখক মহিউদ্দিন আহমদ

বই - এক-এগারো
লেখক - মহিউদ্দিন আহমদ
রিভিউ ক্রেডিট - শামীম হোসাইন 



বইটির দাম অতিমাত্রায় বেশি। তাই আমার ক্রয়সীমার বাইরে ছিল। আর গবেষণা, ইতিহাস ও রাজনৈতিক বইগুলোর ছাড় তেমন নেই বললেই চলে। এসব এক বইয়ের টাকায় একাধিক ফিকশন কেনা যাবে। তবুও নিজের দেশের ইতিহাস জানার তীব্র ক্ষুধা আমাকে তাড়না দেয়। বইটি আমাকে আমার আব্বু কিনে দিয়েছিল গত বছর। কৃতজ্ঞতা সর্বজনীন।

নিজের পিতৃপরিচয় না জানলে যেমন অস্তিত্বহীন, তেমন নিজের দেশের ইতিহাস না জানাটাও অনুরূপ। ইতিহাসে সত্য-মিথ্যা, ভুলভ্রান্তি, মিথ, দলীয় ও ব্যক্তি বন্দনা থেকেই যায়। তাই সকলের মতবাদ পড়াটা আবশ্যিক। একটা দুটো ইতিহাস পড়ে ইতিহাস জানা অসম্ভব। রাজনীতি নিয়ে অবজ্ঞা বিদ্বেষ প্রকাশ করে লাভ হবে না। কারণ এদেশের জন্মাই হয়েছে রাজনীতি ও ধর্মের মাধ্যমে। সেটা হোক ১৯৪৭ বা ১৯৭১! তাই রাজনীতি ও ধর্মকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই বাংলাদেশে। এটা আমরা কেউ না চাইলেও, এসব আমাদের জীবনের সাথে মিশ্রিত। 

সে এক অদ্ভুত সময়! বাংলাদেশের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকা একটা সময়ের নাম এক-এগারো। অবিশ্বাস ও বেইমানি এবং স্বার্থান্বেষী মহলের রাজনীতিটা দেখা হয়েছিল সেই ২০০৬ শেষের কয়েকটি মাস। ২৮শে অক্টোবর ২০০৬ সালে বিরোধী দল হয়ে সরকারী দলের কর্মীদের উপর নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছিল এদেশের একটি তথাকথিত রাজনৈতিক দল। লগি-বইঠার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড! যা ইতিহাসের এক নিকৃষ্ট অংশ। অতঃপর জরুরী অবস্থা। এরপরই সেই ২০০৭-০৮ এর অদ্ভুত সময়। সামরিক শাসন দেশের জন্য যে কতটা ক্ষতিকর, তা ইতিহাস বলে। এখন যে গণতান্ত্রিক শাসন চলছে, তা বলবো না। সামরিক শাসন লাইট বলা যায়।

সে যাই হোক। ইতিহাস বোদ্ধা হিসেবে বর্তমান মহিউদ্দিন আহমদ পথিকৃৎ। তিনি যে সাচ্চা ইতিহাস তুলে ধরে, তা একদমই না। তবে মোটামুটি বলা যায়। ১১ই জানুয়ারি ২০০৭। বিকেলে বঙ্গভবনে মঞ্চস্থ হলো রুদ্ধশ্বাস নাটক। হঠাৎই বদলে গেলো দেশের হালচাল। ক্ষমতায় এলো সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। লাইনচ্যুত গাড়ি ফের লাইনে তুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে সরকার হাত দিলো অনেকগুলো কাজে, যা প্রশংসা ও নিন্দা দুটোই কুড়িয়েছে। উথাল-পাথাল এই দুই বছর ছিল ঘটনাবহুল। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো এ অধ্যায়। 

প্রথমে কেয়ারটেকার সরকার ভালো উদ্যোগ নিলেও, পরে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পরে। নিত্যপণ্যোর অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ও ফখর-মঈন এর সকল অপকর্মের দায় এসে পড়ে বিএনপির ঘাড়ে। অতঃপর পরিবর্তন। ক্ষমতায় বসে মহাজোট। 

এইসময়ের ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা, তৎকালীন পত্রিকার রেফারেন্স ও সক্রিয় কিছু লোকের সাক্ষাৎকারসহ নানা কিছুতে ভরা বইটি। বিএনপির ভিতরে-বাহিরে ষড়যন্ত্র, দ্বন্দ্ব, কথিত কিছু লোক বেইমানি করে দাবি তোলে তথাকথিত সংস্কারের। যাদের সংস্কারপন্থী হিসেবে সবাই চেনে। নিজের লোকেরা বেইমানি করলে, তা ভয়াবহ হয়। সেটাই দেখা গিয়েছিল বিএনপির তৎকালীন রাজনীতিতে। কতিপয় উগ্রবাদী কিছু বেইমানদের জন্য বিএনপি আজো ক্ষমতার বাইরে। একা লড়ে গিয়েছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তবে একা কি আর সব হয়? নানা ঘটনা ও ষড়যন্ত্রের উপাখ্যান করার চেষ্টা করেছেন লেখক। 

বইটি ভালোই ছিল। লেখক অনেক পরিশ্রম করেছে। অনেকের মিথ্যা বক্তব্যের বিরুদ্ধে দলিল দস্তাবেজ দিয়ে সত্য নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন। আবার কোনো জায়গায় খুব কৌশলে এড়িয়ে গেছে। তিনিও কিছু জায়গায় অসত্যের আশ্রয় নিয়েছেন৷ খুব বুঝেশুনে কিছু অপ্রিয় সত্যকে অবজ্ঞা করে এড়িয়ে গেছেন৷ সেটা বোধহয় দেশের চলমান রাজনৈতিক কারণেই। ভারতীয় আগ্রাসনের কিছু নমুনাও আঁকার চেষ্টা করেছেন। মোটামুটি ভালোই ছিল। এক-এগারো নিয়ে পড়া আমার সপ্তম বই এটা। সেই সুবাদে এটা কিছু তথ্যসমৃদ্ধ। আগের ছয়টাও ভালো ছিল। এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সর্বাঙ্গে শুধু ষড়যন্ত্র। সেই শুরু থেকেই। এই সময়টাও তাই। পড়ে নিবেন বইটি, আশা করি খারাপ লাগবে না।