কমফোর্ট-জোন এবং আত্মবিশ্বাস
প্রখ্যাত লেখক মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ বলে থাকেন— ‘ক্যান্সার সবচাইতে মারাত্মক মারণঘাতী রোগ নয়। সবচে মারাত্মক মারণঘাতী রোগ হলো আত্মতুষ্টি। আর মজার ব্যাপার হলো, আত্মতুষ্টি জন্ম নেয় সাফল্য থেকে এবং এ দুটো একই প্যাকেটে করে আসে।’
আমরা যদি কমফোর্ট-জোনের ভেতরে বেশি সময় কাটাই, তখন এর বাইরের সবকিছুকে আমরা ভয় পেতে শুরু করি। মুসলিম উম্মাহর বিভিন্ন দলের ক্ষেত্রে এটা ভীষণভাবে মিলে যায়। তারা নিজেদের চিন্তা, জীবনধারায় এতটা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে যে, অন্য দলের কারও সাথে মিশতেও যেন ভীতি অনুভব করে।
কমফোর্ট-জোনের এই পীড়া কারও কারও ক্ষেত্রে এমনও পর্যায়ে গিয়েছ যে, তারা কুরআন অর্থ বুঝে পড়তে পর্যন্ত ভয় পায়। তাদের ভয়, কুরআন বুঝে পড়তে গিয়ে না জানি এমন কোনো সত্য বের হয়ে আসে, যা তাদের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাসকে হুমকিতে ফেলে দেয়! যেটাতে তারা অস্বস্তিতে পড়ে যাবে আর নিজেদের বিশ্বাস ও চিন্তা নিয়ে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়বে।
এভাবে কমফোর্ট-জোন আমাদের আত্মবিশ্বাসকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই অভ্যাসের কারণে বাইরের পৃথিবীতে আমাদের তেমন পদচারণা হয়ে ওঠে না। অথচ ঘর ছেড়ে দুই পা আগালে যে পৃথিবী, তার ভেতর যে কত কল্যাণ, অপার সম্ভাবনা বিদ্যমান, তা আমাদের হাসিল করা হয়ে ওঠে না।
কমফোর্ট-জোনকে আমাদের প্রশান্তির জায়গা হিসেবে দেখা উচিত। যেখানে আমরা আবারো চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারি, সতেজ নিঃশ্বাসে আবারও আমাদের হারানো শক্তি জাগিয়ে তুলতে পারি; কিন্তু কমফোর্ট-জোন যেন আমাদের গ্রাস করে না ফেলে। আমাদের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। বাইরের পৃথিবীটা ঘুরে দেখা আর কমফোর্ট-জোনের আরাম, দুটোকে পাশাপাশি রেখে আমাদের জীবন সাজাতে হবে। কমফোর্ট-জোনের সীমানা বাড়াতে হলে অতি অবশ্যই আমাদের কমফোর্ট-জোনের বদ্ধ সীমানা ছেড়ে বের হতে হবে, পুরো দুনিয়াটাকেই নিজের কমফোর্ট-জোন বানিয়ে ফেলতে হবে।
আবার, সাফল্য পেতে হলে ডিস-কমফোর্টকে আমাদের আলিঙ্গন করতে হবে। আগে কখনো পা মাড়ানো হয়নি, এমন জায়গায়ও পদচিহ্ন রাখতে হবে। কারণ, জগতের রীতিই এটা যে, চমৎকার সব জিনিসগুলো পাওয়া যায় আমাদের কমফোর্ট-জোনের সীমানার বাইরে। লক্ষ্য অর্জন করতে হলে কিংবা সাফল্যকে ছুঁতে হলে আমাদের কমফোর্ট-জোনের বাইরের ডিস-কমফোর্টে অভ্যস্ত হওয়া শিখতে হবে। এখন নতুন জায়গায় এসে আপনি যে অস্বস্তিটুকু অনুভব করছেন, এটা আসলে ভালো লক্ষণ। কেননা, এর মানে আপনি আস্তে আস্তে নিজেকে উন্নত করছেন, চারপাশ দেখে শিখছেন। এটা আপনাকে এও বলছে যে, আপনার কমফোর্ট-জোন আপনাকে আটকে রাখেনি এবং আপনি ধীরে ধীরে জীবনের লক্ষ্যগুলো পূরণে এগিয়ে চলেছেন।
- বই : সেল্ফ কনফিডেন্স
- লেখক : আবু মুআবিয়া ইসমাইল কামদার
- অর্ডার লিংক কমেন্টে।
